প্রত্যেক মানুষের এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো জানা প্রয়োজন। ফৌজদারি কার্যবিধি ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার হলে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি তৎক্ষণাৎ যা করবেন।
সারা দেশের বাড়তি নিরাপত্তার জন্য তৎপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। যেকোনো মুহূর্তেই তারা আটক বা গ্রেপ্তার করছেন সন্দেহভাজনদেরকে। এই অভিযানে আপনিও পড়ে যেতে পারেন কোনো অপরাধ না করেই।
তখন কী করবেন আপনি?
১) প্রথম বিষয় হলো আতঙ্কিত না হওয়া।
আপনি যদি কোনো অপরাধ না করে থাকেন তাহলে ভয়ের কোনো কারণ নেই। সেটি বাহিনীর সদস্যদের বুঝিয়ে বলতে পারেন। কিন্তু এসবের বাইরে কিছু বিষয় আপনার মনে রাখতে হবে।
যেমন পুলিশ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়া আপনাকে গ্রেপ্তার করতে পারে না। কিন্তু পরোয়ানা ছাড়াই যদি কেউ গ্রেপ্তার হন তাহলে কী করবেন?
কিছু জরুরি পরামর্শ :
সঙ্গে যা রাখবেন :
২) অহেতুক পুলিশি হয়রানি থেকে মুক্ত থাকার জন্য নিজের পেশাগত পরিচয়পত্র ও জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখবেন।
৩) আপনার চেনাজানা দায়িত্বশীল ব্যক্তির নাম, ফোন নম্বর ও ঠিকানা রাখতে পারেন সঙ্গে। এ ছাড়া নিজ এলাকার পুলিশ বা সিভিল প্রশাসনের প্রত্যায়নপত্র রাখা যেতে পারে।
৪) পুলিশ যদি আপনাকে ধরে নিয়ে যায় আপনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অথবা ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলুন।
৫) যদি কোনো প্রকার সহযোগিতা না পান তাহলে আদালতে হাজির করার পর বিচারকের কাছে লিখিত ও মৌখিকভাবে অভিযোগ করতে পারেন।
পুলিশ তল্লাশি করলে যা করবেন :
রাস্তায় চলার পথে অথবা বাসায় কাউকে তল্লাশি করার পর ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী
১) সংশ্লিষ্ট পুলিশকে নিজের থানায় রিপোর্ট করতে হয়।
২) সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে যদি অবৈধ কোনো কিছু পাওয়া না যায় তাহলে, “অবৈধ কিছু পাওয়া যায়নি” এই মর্মে তল্লাশীকারী পুলিশকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে লিখিত একটি অনুলিপি দিতে হবে
৩) এ ক্ষেত্রে রিপোর্টে দুজন দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে সাক্ষী থাকতে হবে।
৪) ওই ব্যক্তিরও উচিত তল্লাশি করার পর পুলিশের কাছ থেকে একটি অনুলিপি নিয়ে নেওয়া।
অভিযোগ ছাড়া কাউকে অনির্দিষ্টকালের জন্য থানায় আটক রাখা যায় না। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে ছেড়ে দিতে হবে। নয় তো কোনো আইনের আওতায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির করতে হবে। তখন ম্যাজিস্ট্রেট প্রয়োজনে আটকাদেশ দিতে পারেন।
গ্রেপ্তার হওয়ার পর :
১) পুলিশের কাছে নাম, ঠিকানা ও পেশাসহ পরিচয় তুলে ধরবেন।
২) পেশাজীবী বা ছাত্র হলে পরিচয়পত্র দেখাবেন। এ ধরনের পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতির অংশ হিসেবে পরিচিত আইনজীবীর ফোন নম্বর সাথে রাখতে পারেন এবং গ্রেপ্তারের পর দ্রুত আইনজীবীকে বিষয়টি জানাবার চেষ্টা করুন।
৩) আত্মীয় বা বন্ধুকে বিষয়টি দ্রুত জানান। ঢাকায় গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হলে মেট্রো রোডের ডিবি অফিসে নেওয়া হয়, আর যেকোনো থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হলে সংশ্লিষ্ট থানায় নেওয়া হয়।
গ্রেপ্তারের পর কাউকে লকআপে রাখার আগে তাঁর বিভিন্ন জিনিসপত্র
যেমন, কাগজ, মোবাইল ফোনসেট, টাকা-পয়সা ও ক্রেডিট কার্ড ইত্যাদি থাকলে তাঁর কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হয়।
তবে সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসার সেগুলোর একটি তালিকা তৈরি করে আটককৃত ব্যক্তির স্বাক্ষর নেন।
এই স্বাক্ষর দেওয়ার সময় তালিকাটি অবশ্যই পড়ে নেওয়া উচিত।
আপনি যদি পুলিশর কাছে কোনো জবানবন্দি দেন তাহলে সেটির লিখিতরূপ ভালোভাবে পড়ে স্বাক্ষর করবেন।
গ্রেপ্তারের পর আইনজীবী বা পরিবারের কাউকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানাতে না পারলে আদালতে হাজির করার পর ম্যাজিস্ট্রেটকে সরাসরি বিষয়টি জানানো উচিত। এতে আইনি সহায়তা পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়।
গ্রেপ্তারের বা আটকের পর কোনো পর্যায়ে নির্যাতনের শিকার হলে বা অসুস্থ্য হলে আদালতের মাধ্যমে বা নিজ উদ্যোগে মেডিকেল পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারবেন। পরীক্ষা করালে এই প্রতিবেদনটি সংগ্রহে রাখবেন। পরীক্ষক চিকিৎসকের পরিচয় জেনে রাখা উচিত কারণ তা পরে প্রয়োজন হতে পারে। পুরনো কোনো মামলায় গ্রেপ্তার হলে দ্রুত ওই মামলার নম্বরসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আদালতে গিয়ে জামিন শুনানির চেষ্টা করা যেতে পারে। নতুন কোনো মামলায় বা কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার হলে একজন আইনজীবীর সাথে পরামর্শক্রমে জামিন শুনানির ব্যবস্থা করতে পারেন। এডভোকেট শামীম
Comments
Post a Comment